কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থের বিস্তারিত আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান (ইসলামহাউস.কম) ১ টি
স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর কিছু বক্তব্য

বাস্তব জীবনে ঘটবে এমন কিছু আকৃতি-প্রকৃতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। এ দেখানোটা স্বপ্নে কখনো সরাসরি আবার কখনো ইঙ্গিত বা প্রতীকী বার্তায় হয়ে থাকে। যেমন আমরা বলে থাকি, স্বপ্নে কাপড় বা জামা দেখার মানে হল দীন-ধর্ম। যদি কাপড় ভালো ও বড় দেখা হয়, তবে তা দীন-ধর্ম, তাকওয়া-পরহেজগারীর উন্নতি নির্দেশ করে। আর তা যদি মলিন, সংকীর্ণ, ছেঁড়া-ফাটা দেখা হয় তবে তা দীন-ধর্মের অবনতি বলে মনে করা হয়ে থাকে।

দীন-ধর্ম যেমন মানুষের আত্মাকে রক্ষা করে, পোশাক তেমনি মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যকে হিফাযত করে। এ জন্য পোশাক আর ধর্ম একে অপরের ইঙ্গিত বহন করে।

স্বপ্নে আগুন দেখা মানে ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা নির্দেশ করে। কারণ, আগুন দৃশ্যমান ধন-সম্পদ জ্বালিয়ে দেয় আর ফিতনা-অরাজকতা মানুষের অন্তর জ্বালায়। মানুষকে অস্থির করে তোলে।

নক্ষত্র বা তারকা স্বপ্নে দেখলে তার অর্থ হয় আলেম-উলামা, জ্ঞানী-গুণি। কারণ, আলেম-উলামা ও জ্ঞানীরা মানুষকে পথ প্রদর্শন করেন। আলোর সন্ধান দেন।

স্বপ্নে ইয়াহূদী দেখার অর্থ হলো দীন-ধর্মের বিষয়ে অবাধ্যতা আর খৃষ্টান দেখার অর্থ হলো, দীন-ধর্মে বিদ‘আত প্রবর্তন ও ধর্মীয় বিষয়ে পথভ্রষ্টতা।

স্বপ্নে লৌহ দেখার অর্থ হলো, শক্তি।

আর দাড়ি-পাল্লা দেখার অর্থ হলো, ন্যায়পরায়ণতা।

স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হলো, শত্রু।

স্বপ্নে নিচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হলো, অবনতি আর উর্ধ্বে উঠতে দেখার অর্থ হলো, উন্নতি।

কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি স্বপ্নে দেখে সে চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে মৃত্যু। আর যদি সে স্বপ্ন দেখে কথা বলতে বলতে সে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে জীবন ও সুস্থতা।

যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, তার মৃত্যু হচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হবে সে পাপাচার থেকে তাওবা করবে। কেননা মৃত্যু মানে হলো, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ثُمَّ رُدُّوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ مَوۡلَىٰهُمُ ٱلۡحَقِّۚ ﴾ [الانعام: ٦٢]

“অতঃপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদের সত্যিকার প্রভু আল্লাহর কাছে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৬২]

এখানে ফিরিয়ে নেওয়া মানে মৃত্যু। আর তাওবা অর্থ ফিরে আসা।

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হাবেছ ইবন সাআদ আত-তাঈকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিলেন। একদিন হাবেছ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি স্বপ্নে দেখলাম, চাঁদ আর সূর্য যুদ্ধ করছে। আর নক্ষত্রগুলো দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তুমি কার পক্ষে ছিলে? চাঁদের পক্ষে না সূর্যের?

তিনি উত্তরে বললেন, আমি চাঁদের পক্ষে ছিলাম। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তাহলে আমি তোমার নিয়োগ প্রত্যাহার করে নিলাম। কারণ, তুমি একটি মুছে যাওয়া শক্তির পক্ষে ছিলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَجَعَلۡنَا ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ ءَايَتَيۡنِۖ فَمَحَوۡنَآ ءَايَةَ ٱلَّيۡلِ وَجَعَلۡنَآ ءَايَةَ ٱلنَّهَارِ مُبۡصِرَةٗ﴾ [الاسراء: ١٢]

“আর আমরা রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন (চাঁদকে) আর দিনের নিদর্শন (সূর্য) কে করেছি আলোকময়”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১২]

আর তুমি একটি বিভ্রান্তিতে নিহত হবে। পরে দেখা গেল সত্যিই সে সিফফীনের যুদ্ধে সিরিয়াবাসীদের দলে থেকে নিহত হলো।[1]

স্বপ্নে বাগান দেখার অর্থ হলো, কাজ ও চাকুরী। আর বাগান পুড়ে যাওয়া দেখলে অর্থ হবে বেকারত্ব ও পতন।

[1] সূত্র: আল ইসাবাহ ফী তামীযিস সাহাবাহ: ইবন হাজার রহ.